শহরের ভিড় এড়িয়ে শান্ত পাহাড়ি গ্রামে! লাটপাঞ্চার ভ্রমণ গাইড

Latpanchar Travel Guide (লাটপাঞ্চার ভ্রমণ গাইড)

Latpanchar village

 হঠাৎই শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে?

পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ, ঝোপঝাড়ের ফাঁকে উড়ে বেড়ানো লাল মনাল পাখি আর দূরে দার্জিলিং এর তুষারাবৃত শৃঙ্গ — লাটপাঞ্চার যেন প্রকৃতির বুকে লুকিয়ে থাকা এক স্বপ্নের গ্রাম।লাটপাঞ্চার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়রণ্য একটি পাহাড়ি গ্রাম | এটি সুমোদ্রপৃষ্টি থেকে প্রায় 4200 -4500 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত | শিলিগুড়ির এখানে দুরত্ব প্রায় 41 কিমি মতো , এখন থেকে কোনো বাস পাওয়া যায় না কিন্তু এখন থেকে আপনি প্রাইভেট কার বা ট্যাক্সিতে যেতে পারবেন | দার্জিলিং এর ভিড় থেকে দূরে, কম জনবহুল এই গ্রাম এখনো পর্যটকের ভিড়ে ক্লান্ত নয়। যারা প্রকৃতিকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখতে চান, তাদের জন্য লাটপাঞ্চার এক আদর্শ গন্তব্য।

ভ্রমণের যাবার সেরা সময়

অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত লাটপাঞ্চারের আবহাওয়া শীতল ও শান্ত থাকে ,এই সময়ে আকাশ সাধারণত পরিষ্কার থেকে এবং পাখি দেখার সেরা সময়ে । বর্ষাকাল (জুন - সেপ্টেম্বর ) এড়িয় চালায় ভালো ,কারণ ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের আশঙ্কা থাকে । শীতের ছুটির সময় (নভেম্বর - জানারী ) সকল - বিকেলের সূর্যোদয় এবং পাহাড়ের দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে যাবেন ।

Latpanchar Travel Guide

দর্শনীয় স্থানসমূহ

নামথিং পুখারি (সোলামান্ডার পুকুর ): একটি প্রাকৃতিক হ্রদ যা হিমালয় ও স্যাম্যান্ডারের অবাস | এখানে প্রাকৃতিক মাঝে ঘুরতে গিয়ে স্যাম্যান্ডার দেখা যেতে পারে এবং আসে পাশে শাল - সেকাল বন রয়েছে ।

লেপচা বৌধ মঠ : নামথিং পুখরীর কাছে প্রায় 150 বছরের পুরনো বৌদ্ধ মঠ , যা কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ আশপাশের দৃশ্য দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।

আহাল (আহালদারা ) সানরাইজ পয়েন্ট: লাটপঞ্চার থেকে কিছুদূর পাহাড়ের চূড়া , সেখান থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার মজাটাই আলাদা। এছাড়া আপনি এখান থেকে মেঘমুক্ত দিনে কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ বিশাল পর্বতমালার দৃষ্টিভঙ্গি উপভোগ করতে পারেন ।

রাজা রানী হিম ও শিব মন্দির: লাটপঞ্চার থেকে ৬ কিমি দূরে একটি হিলটপ ট্রেকিং মধ্যে দিয়ে গিয়ে দেখতে পাবেন আপেল ফলের বাগান ,ও মন মুগ্ধ মধুর পাখির ডাগ ও পরিবৃত্তের মাঝে পাহাড়ি পথের হাঁটা মজাটাই এক অন্য রকম| শিব মন্দির চেতায় দার্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়।

লতকোঠি গ্রাম : লাটপঞ্চার থেকে ৪ কিমি দূরে একটি গ্রাম , যেখানে চল্লিশো - সেকাল গাছ ও মনোরম সবুজাভ পরিবেশ আছে। একটি সহজ সাফারি বা ট্রেকিং ট্রিপ দিয়ে এই অঞ্চলের প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুযোগ মেলে।

পাখি ও বন্যজীবন : লাটপাঞ্চর পাখি প্রেমীদের জন্য স্বর্গ রূপ । এখানে ২০০ এর বেশি পাখি প্রজাতির বাস করে। রুফাস নেকড কর্ণবিলে এবং বিভিন্ন বনজ প্রাণীও দেখা যায় ।

লাটপাঞ্চর পাখি

কিভাবে যাবেন লাটপাঞ্চার ?

লাটপাঞ্চার যেতে হলে প্রথমে আপনাকে পৌঁছতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) বা বাগডোগরা বিমানবন্দর পর্যন্ত। কলকাতা থেকে ট্রেনে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছনোই সবচেয়ে সুবিধাজনক। স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ৩৫ কিমি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেই লাটপাঞ্চার। পথে দার্জিলিং এর চা-বাগান, পাইন ফরেস্ট আর সরু পাহাড়ি রাস্তা আপনাকে স্বপ্নের মতো এক যাত্রা উপহার দেবে।

লোকাল শেয়ার জিপের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, তাই ছোট গ্রুপে গেলে প্রাইভেট গাড়ি শেয়ার করে নিলেই ভালো। শিলিগুড়ি থেকে একবারে গাড়ি বুকিং করলে ২০০০-২৫০০ টাকার মধ্যে যাতায়াত হয়ে যাবে।

থাকার ব্যবস্থা ও হোটেল/হোমস্টে

লাটপাঞ্চারে বড় হোটেল বা রিসোর্ট নেই; স্থানীয় গ্রামবাসী পরিচালিত হোমস্টে ও গেস্টহাউস পাওয়া যায়। এসব হোমস্টেতে সাধারণত বহিরাগত স্নানাগারযুক্ত বাথরুম, গরম জলের ব্যবস্থা ও পাহাড়ি দৃশ্য যুক্ত কক্ষ থাকে। যেমন, Latpanchar Hornbill Nest, Namaste Latpanchar ইত্যাদি জনপ্রিয়। হোমস্টে প্যাকেজে সাধারণত ২ জনের জন্য প্রতি জন ≈ ₹১২০০/দিন (বিডটিসি) ফি থাকে (খাবারসহ)। মোটামুটি সার্ভিসযুক্ত কাঠের কটেজে থাকার বাবদ ₹২২০০–২৫০০/রাত খরচ হতে পারে। কটেজগুলিতে কর্পেট, গরম পানি, বিদ্যুৎ ও ওয়েস্টার্ন বাথরুম থাকে। বাজেট পর্যায়ের ভ্রমণকারীদের জন্য সস্তা হোমস্টে, আর কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মাঝারি-দামের কাঠের কটেজ জনপ্রিয়।

লাটপাঞ্চর হোটেল

খাবার ও স্থানীয় রেস্তোরাঁ

লাটপাঞ্চারের খাবার বেশিরভাগই হোমস্টে-তে রান্না করা স্থানীয় খাবারই, যা সাধারণত বাঙালি ও পাহাড়ি ভাঁজ মিশ্রিত স্বাদ দেয়। প্রাতরাশ-লাঞ্চ-ডিনার-চা–সহ হোমস্টে প্যাকেজে চাল, ডাল, সবজি,  মুরগির মাংস, মাছের তরকারি ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়। যেমন, এক ভ্রমণব্লগে উল্লেখ করা হয়েছে যে এখানে ভাত, ডাল, সবজি, মাছের ঝোলসহ পুরোপুরি পার্বত্য বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়। গ্রামে কয়েকটি ছোট চায়ের দোকান ও স্ন্যাকসের দোকান আছে, তবে রেস্তোরাঁয়ের জন্য কাছের বড় শহরে (সিলিগুড়ি বা কুর্সিওং) যেতে হয়। স্থানীয় রান্নার স্বাদ সাধারণত বেশি তেল-মশলা যুক্ত, তাই বিদেশি বা ননভেজ অনুরাগীদের সতর্ক থাকতে হতে পারে।

আনুমানিক বাজেট

যাতায়াত: নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে লাটপাঞ্চার পর্যন্ত প্রাইভেট কার ভাড়া ≈ ₹২৪০০ (একমুখী)। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া সামান্য বেশি (≈₹২৮০০)। ভ্রমণে সিলিগুড়ি-লাটপাঞ্চার দূরত্ব ≈৪১ কিমি, যা কারে ≈২ ঘণ্টা সময় নেয়।

থাকা: হোমস্টে প্যাকেজে প্রতি জনের জন্য ≈₹১২০০/দিন, মানে দম্পতির রুমের জন্য ≈₹২৪০০/রাত (খাবারসহ)।

খাবার: অধিকাংশ খাবার হোমস্টে প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত, অতিরিক্ত চা বা হালকা খাবারের জন্য প্রতিজন ≈₹১০০–২০০ অতিরিক্ত লাগতে পারে।

দর্শন ও অন্যান্য: গাইড বা অভ্যন্তরীণ পরিবহনের জন্য প্রতিদিন ≈₹১০০০ খরচ হতে পারে। এছাড়া কাঠামো এডমিশন টিকিট নেই।

মোট আনুমানিক খরচ: ২ রাত্রির সফরে ২ জনের জন্য যাতায়াত, থাকা ও খাওয়া মিলিয়ে প্রায় ₹৭০০০–১০০০০ খরচ হতে পারে। (সীজন ও পরিবহনের ধরণভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।)

পরিবারসহ ভ্রমণ

লাটপাঞ্চার নিরাপদ একটি গ্রামবাংলা পরিবেশের স্থান, তাই পরিবার (শিশুসহ) নিয়ে আসা যেতে পারেন। স্থানীয় মানুষ অতিথিপরায়ণ ও পরিবেশ শান্ত। শিশু-বয়স্কদের জন্য হোমস্টে সাধারণত আরামদায়ক, তবে পুরোপুরি শহুরে সুযোগ-সুবিধা নেই। পাহাড়ি পথে হেঁটে যাওয়া ও জঙ্গলে ট্রেকিং-এ একটু সতর্ক থাকলে পরিবারের সবার জন্য ভ্রমণ উপভোগ্য হবে।


Previous Post Next Post